০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে ছাপ রেখে গেলেন মাহমুদউল্লাহ

ডেস্ক নিউজ:
  • আপডেট সময়ঃ ১০:৪৯:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে।

গুঞ্জনটা সত্যি হতেই একটা অধ্যায়ের পাতা উলটে ফেলল বাংলাদেশের ক্রিকেট। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অধ্যায়টা যে শেষ হয়ে গেল!

বয়সটা ৩৯ ছুঁল এই গেল মাসে। এই বয়সটা ঝরে পড়ার বয়স। তবে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট চলছিল ভালোই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তো তিনি পা রেখেছিলেন ওয়ানডেতে টানা চার ফিফটি করে।

আইসিসির এই ইভেন্টে অবশ্য সে পারফর্ম্যান্সটা টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগে এক চোট তাকে প্রথম ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিল, দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরলেন বটে, কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি করতে পারলেন ১৪ বলে মোটে ৪ রান।

আধুনিক ক্রিকেটে ফিল্ডিং দিয়েও প্রভাব ফেলা যায়, রিয়াদ যে ফিল্ডিংয়েও ছিলেন বেশ বিবর্ণ। সব মিলিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। সেটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শেষ স্মৃতি হয়ে রইল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচটাই তার শেষ ম্যাচ হয়ে রইল।

আভাসটা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। গেল সোমবার যখন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রাখা হলো তাকে, সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজের নাম। এরপর থেকেই গুঞ্জন ছিল, তিনি এবার অবসরের ঘোষণাই দেবেন। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ মাহমুদউল্লাহ সে গুঞ্জনকে সত্যি করে বিদায়েরই ঘোষণা দেন।

কথায় আছে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। তবে মাহমুদউল্লাহর শেষটা দেখে সে কথার যথার্থতা ঠাহর করার উপায় নেই। শেষটা তেমন ভালো না হলেও যে তার পুরো ক্যারিয়ারকে ভালো নয় বলার উপায় রাখেননি তিনি!

তিনি যখন দলে এলেন, তখন স্কোয়াডে তো বটেই, জাতীয় দলের পুলেই বেশুমার বাঁহাতি স্পিনার। কিন্তু ডানহাতি স্পিনারের অভাব ছিল বেশ। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকে কিছুটা ঝলক দেখিয়েছিলেন।

তবে তার ডানহাতি অফ স্পিনের আসল ভেলকিটা তিনি দেখিয়েছিলেন ২০০৯ সালে, টেস্ট অভিষেকে। সে ম্যাচে তিনি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জয়। দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। তবে প্রথম ইনিংসে ৩ আর শেষ ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে তিনি বনে গিয়েছিলেন জয়ের অন্যতম নায়ক।

বোলিং দিয়ে যে আশা দেখিয়েছিলেন, সেটা কুড়ি হয়ে ফুটতে পারেনি আর। মাহমুদউল্লাহ তার ক্যারিয়ারে আর এভাবে বোলিং দিয়ে আলো কেড়ে নিতে পেরেছিলেন সামান্যই।

তবে তিনি ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে আলোর দিশা দিয়েছেন বহুবার। একটু দেরিতেই হয়েছিল তার ব্যাটার সত্ত্বার উত্থানটা। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপ সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান, সেই ম্যাচে দল পায় বিখ্যাত এক জয়, যা দলকে প্রথমবারের মতো নিয়ে যায় আইসিসি বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে। এরপরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও করে ফেলেন সেঞ্চুরি।আইসিসি ইভেন্ট এলেই যেন তার ব্যাট জ্বলে উঠত। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মিলে তার সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অসামান্য এক জয়, যাতে ভর করে প্রথমবারের মতো আইসিসি ইভেন্টের সেমিফাইনালে পা রাখে বাংলাদেশ।

এই তো, বেশি দিন দূরও নয়। ২০২৩ বিশ্বকাপেও তো তার ব্যাট হেসেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আর সবাই যখন নুইয়ে পড়ছেন চাপে, তখন তিনি বুক চিতিয়ে করেছেন এক সেঞ্চুরি। তাতে জয় অবশ্য আসেনি, কিন্তু নিদেনপক্ষে একটা মুখ রক্ষা হয়েছে বটে।

টেস্ট ক্যারিয়ারটা তার আগেই শেষ করে ফেলেছিলেন। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পরপরই জানিয়ে দেন, আর টেস্টে খেলবেন না তিনি। বোলিংটা কাঁধের চোটের কারণে কোভিডের আগে থেকেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর টেস্ট থেকে বিদায়, ক্যালেন্ডারের পাতা বলছিল, সময় ফুরিয়ে আসছে।

ব্যাটিংটা তার ক্যারিয়ারসেরা ছন্দে ছিল কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রথম আমলে। সেই হাথুরুর দ্বিতীয় মেয়াদেই তিনি মুদ্রার উলটো পিঠটা দেখে ফেলেছিলেন। ব্যাটিংয়ে রান করছিলেন বটে, কিন্তু সেটা মোটেও সময়ের চাহিদা মেনে স্ট্রাইক রেট ঠিক রেখে আসছিল না, ফিল্ডিংয়েও ছিলেন বড্ড ম্লান। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের আগে অঘোষিতভাবে দল থেকে বাদ দেওয়া হয় ‘বিশ্রামের’ নাম করে। তার ক্যারিয়ারের এপিটাফও তখন লিখে ফেলেছিলেন অনেকে।

আর সবাই হলে হয়তো কোনো একটা প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, মাহমুদউল্লাহও দেখালেন বটে, কিন্তু তা কাজ দিয়ে। যে সব কারণে তাকে বাদ দেওয়া হয় মাহমুদউল্লাহ তা শুধরে আবারও ফিরলেন জাতীয় দলে, বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে। সেখানেই এল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই সেঞ্চুরিটা।

টি-টোয়েন্টিতে আগেই ব্রাত্য হয়ে গিয়েছিলেন। ওয়ানডের ফর্ম তাকে এরপর টি-টোয়েন্টিতেও দলে ফেরায়। বিশ্বকাপে তার ব্যাটে চড়েই তো গেল বছর লঙ্কা-বধ করে বাংলাদেশ, যার লেজে ধরে চলে আসে সুপার এইটে খেলার সুযোগটাও। সে বিশ্বকাপে অবশ্য মুদ্রার উলটো পিঠটাও দেখিয়েছেন রিয়াদ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন ১২.৫ ওভারে দলের প্রয়োজন ছিল রান তাড়া করার, সে সময় এক ওভারে ৫ ডট দিয়ে তিনি সমালোচিতও হয়েছেন অনেক।

সমালোচনা পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে তার সঙ্গী ছিল। তবে সেসব মুখ বুজে সয়ে মাঠে পারফর্ম করেছেন মাহমুদউল্লাহ। তার সে দীর্ঘ, ক্লান্তিকর যাত্রার শেষটা হলো আজ।

কেউ বিদায় নিলে তাকে কীভাবে মনে রাখবে মানুষ, এমন একটা প্রশ্ন উঠে যায়। মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রেও ওঠাটা অমূলক নয়। দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে ২৩৯ ওয়ানডেতে করেছেন ৫৬৮৯ রান। ৪ সেঞ্চুরির সবকটিই আইসিসি টুর্নামেন্টে। ৫০ টেস্টে ৫ সেঞ্চুরিতে করেছেন ২৯১৪ রান। টি-টোয়েন্টিতে ১২১ ম্যাচে ৮ ফিফটিতে করেছেন ২৪৪৪ রান। সব ফরম্যাট মিলিয়ে বল হাতে নিয়েছেন ১৬৬ উইকেট।

সেসব অবশ্য কাগুজে হিসেব। সেসব একপাশে রাখলে মাহমুদউল্লাহর নাম নিলে চলে আসবে ২০১৫ বিশ্বকাপের ওই দুই সেঞ্চুরি, ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ছক্কা, ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই লড়াকু ৪৪ রানের ইনিংস কিংবা কিংসটাউনের মাটিতে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের পতাকা গায়ে চড়িয়ে লাজুক হাসি হেসে মাঠ ছাড়ার দৃশ্য। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাই কম ছাপ রেখে যাননি মাহমুদউল্লাহ, কী বলেন?

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে ছাপ রেখে গেলেন মাহমুদউল্লাহ

আপডেট সময়ঃ ১০:৪৯:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

গুঞ্জনটা সত্যি হতেই একটা অধ্যায়ের পাতা উলটে ফেলল বাংলাদেশের ক্রিকেট। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অধ্যায়টা যে শেষ হয়ে গেল!

বয়সটা ৩৯ ছুঁল এই গেল মাসে। এই বয়সটা ঝরে পড়ার বয়স। তবে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট চলছিল ভালোই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তো তিনি পা রেখেছিলেন ওয়ানডেতে টানা চার ফিফটি করে।

আইসিসির এই ইভেন্টে অবশ্য সে পারফর্ম্যান্সটা টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগে এক চোট তাকে প্রথম ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিল, দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরলেন বটে, কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি করতে পারলেন ১৪ বলে মোটে ৪ রান।

আধুনিক ক্রিকেটে ফিল্ডিং দিয়েও প্রভাব ফেলা যায়, রিয়াদ যে ফিল্ডিংয়েও ছিলেন বেশ বিবর্ণ। সব মিলিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। সেটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শেষ স্মৃতি হয়ে রইল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচটাই তার শেষ ম্যাচ হয়ে রইল।

আভাসটা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। গেল সোমবার যখন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রাখা হলো তাকে, সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজের নাম। এরপর থেকেই গুঞ্জন ছিল, তিনি এবার অবসরের ঘোষণাই দেবেন। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ মাহমুদউল্লাহ সে গুঞ্জনকে সত্যি করে বিদায়েরই ঘোষণা দেন।

কথায় আছে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। তবে মাহমুদউল্লাহর শেষটা দেখে সে কথার যথার্থতা ঠাহর করার উপায় নেই। শেষটা তেমন ভালো না হলেও যে তার পুরো ক্যারিয়ারকে ভালো নয় বলার উপায় রাখেননি তিনি!

তিনি যখন দলে এলেন, তখন স্কোয়াডে তো বটেই, জাতীয় দলের পুলেই বেশুমার বাঁহাতি স্পিনার। কিন্তু ডানহাতি স্পিনারের অভাব ছিল বেশ। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকে কিছুটা ঝলক দেখিয়েছিলেন।

তবে তার ডানহাতি অফ স্পিনের আসল ভেলকিটা তিনি দেখিয়েছিলেন ২০০৯ সালে, টেস্ট অভিষেকে। সে ম্যাচে তিনি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জয়। দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। তবে প্রথম ইনিংসে ৩ আর শেষ ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে তিনি বনে গিয়েছিলেন জয়ের অন্যতম নায়ক।

বোলিং দিয়ে যে আশা দেখিয়েছিলেন, সেটা কুড়ি হয়ে ফুটতে পারেনি আর। মাহমুদউল্লাহ তার ক্যারিয়ারে আর এভাবে বোলিং দিয়ে আলো কেড়ে নিতে পেরেছিলেন সামান্যই।

তবে তিনি ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে আলোর দিশা দিয়েছেন বহুবার। একটু দেরিতেই হয়েছিল তার ব্যাটার সত্ত্বার উত্থানটা। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপ সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান, সেই ম্যাচে দল পায় বিখ্যাত এক জয়, যা দলকে প্রথমবারের মতো নিয়ে যায় আইসিসি বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে। এরপরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও করে ফেলেন সেঞ্চুরি।আইসিসি ইভেন্ট এলেই যেন তার ব্যাট জ্বলে উঠত। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মিলে তার সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অসামান্য এক জয়, যাতে ভর করে প্রথমবারের মতো আইসিসি ইভেন্টের সেমিফাইনালে পা রাখে বাংলাদেশ।

এই তো, বেশি দিন দূরও নয়। ২০২৩ বিশ্বকাপেও তো তার ব্যাট হেসেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আর সবাই যখন নুইয়ে পড়ছেন চাপে, তখন তিনি বুক চিতিয়ে করেছেন এক সেঞ্চুরি। তাতে জয় অবশ্য আসেনি, কিন্তু নিদেনপক্ষে একটা মুখ রক্ষা হয়েছে বটে।

টেস্ট ক্যারিয়ারটা তার আগেই শেষ করে ফেলেছিলেন। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পরপরই জানিয়ে দেন, আর টেস্টে খেলবেন না তিনি। বোলিংটা কাঁধের চোটের কারণে কোভিডের আগে থেকেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর টেস্ট থেকে বিদায়, ক্যালেন্ডারের পাতা বলছিল, সময় ফুরিয়ে আসছে।

ব্যাটিংটা তার ক্যারিয়ারসেরা ছন্দে ছিল কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রথম আমলে। সেই হাথুরুর দ্বিতীয় মেয়াদেই তিনি মুদ্রার উলটো পিঠটা দেখে ফেলেছিলেন। ব্যাটিংয়ে রান করছিলেন বটে, কিন্তু সেটা মোটেও সময়ের চাহিদা মেনে স্ট্রাইক রেট ঠিক রেখে আসছিল না, ফিল্ডিংয়েও ছিলেন বড্ড ম্লান। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের আগে অঘোষিতভাবে দল থেকে বাদ দেওয়া হয় ‘বিশ্রামের’ নাম করে। তার ক্যারিয়ারের এপিটাফও তখন লিখে ফেলেছিলেন অনেকে।

আর সবাই হলে হয়তো কোনো একটা প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, মাহমুদউল্লাহও দেখালেন বটে, কিন্তু তা কাজ দিয়ে। যে সব কারণে তাকে বাদ দেওয়া হয় মাহমুদউল্লাহ তা শুধরে আবারও ফিরলেন জাতীয় দলে, বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে। সেখানেই এল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই সেঞ্চুরিটা।

টি-টোয়েন্টিতে আগেই ব্রাত্য হয়ে গিয়েছিলেন। ওয়ানডের ফর্ম তাকে এরপর টি-টোয়েন্টিতেও দলে ফেরায়। বিশ্বকাপে তার ব্যাটে চড়েই তো গেল বছর লঙ্কা-বধ করে বাংলাদেশ, যার লেজে ধরে চলে আসে সুপার এইটে খেলার সুযোগটাও। সে বিশ্বকাপে অবশ্য মুদ্রার উলটো পিঠটাও দেখিয়েছেন রিয়াদ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন ১২.৫ ওভারে দলের প্রয়োজন ছিল রান তাড়া করার, সে সময় এক ওভারে ৫ ডট দিয়ে তিনি সমালোচিতও হয়েছেন অনেক।

সমালোচনা পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে তার সঙ্গী ছিল। তবে সেসব মুখ বুজে সয়ে মাঠে পারফর্ম করেছেন মাহমুদউল্লাহ। তার সে দীর্ঘ, ক্লান্তিকর যাত্রার শেষটা হলো আজ।

কেউ বিদায় নিলে তাকে কীভাবে মনে রাখবে মানুষ, এমন একটা প্রশ্ন উঠে যায়। মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রেও ওঠাটা অমূলক নয়। দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে ২৩৯ ওয়ানডেতে করেছেন ৫৬৮৯ রান। ৪ সেঞ্চুরির সবকটিই আইসিসি টুর্নামেন্টে। ৫০ টেস্টে ৫ সেঞ্চুরিতে করেছেন ২৯১৪ রান। টি-টোয়েন্টিতে ১২১ ম্যাচে ৮ ফিফটিতে করেছেন ২৪৪৪ রান। সব ফরম্যাট মিলিয়ে বল হাতে নিয়েছেন ১৬৬ উইকেট।

সেসব অবশ্য কাগুজে হিসেব। সেসব একপাশে রাখলে মাহমুদউল্লাহর নাম নিলে চলে আসবে ২০১৫ বিশ্বকাপের ওই দুই সেঞ্চুরি, ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ছক্কা, ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই লড়াকু ৪৪ রানের ইনিংস কিংবা কিংসটাউনের মাটিতে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের পতাকা গায়ে চড়িয়ে লাজুক হাসি হেসে মাঠ ছাড়ার দৃশ্য। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাই কম ছাপ রেখে যাননি মাহমুদউল্লাহ, কী বলেন?

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন