কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে সিলেট২১ ডট কম পরিবারের শোক
- আপডেট সময়ঃ ১০:২৫:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩২ বার পড়া হয়েছে।
কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সিলেট২১ ডট কম পরিবার ,
শুক্রবার এক শোকবার্তায় সিলেট২১ ডট কম প্রধান সম্পাদক আবুবকর সিদ্দিক সুমন কবির রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শোকবার্তায় বলা হয়, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যু আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। বিশেষ করে ফ্যাসিবাদ পতনোত্তর সময়ে তরুণরা যখন নতুন করে দেশকে গড়ে তুলতে সংগ্রাম করছে তখন দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের উপস্থিতি একান্ত কাম্য ছিল।
শুক্রবার শাহবাগের সুপার হোম হোস্টেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি হেলাল হাফিজ। এখন তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রাখা হয়েছে।
‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’-র মতো অসংখ্য অমর পঙক্তির রচয়িতা কবি হেলাল হাফিজ গত ৭ অক্টোবর ৭৭ বছরে পদার্পণ করেছিলেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে অনেকটা শয্যাশায়ী ছিলেন কবি।
বেশ কয়েক বছর ধরে শাহবাগে ‘সুপার হোস্টেল’ নামের একটি হোটেলে বসবাস করেছেন তিনি। জন্মদিনের সময় নিজের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে কবি বলেছিলেন, ‘শেষ সময়ে আছি, লাস্ট-স্টেজ বলা যায়। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। শরীর অনেক নাজুক হয়ে গেছে আমার। একেবারে শয্যাশায়ী। আমি একদম ভালো নেই। দীর্ঘদিন ধরে গ্লুকোমায় আক্রান্ত। পাশাপাশি কিডনি, ডায়াবেটিস ও স্নায়ু জটিলতার মতো নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছি।’
১৯৮১ সালে প্রকাশিত কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়ে কোটি ভক্তের হৃদয় জয় করেছেন হেলাল হাফিজ। সে বইয়ের কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’তে কবি লিখেছিলেন, ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। কবির এই পঙক্তি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
প্রসঙ্গত,
ছোটবেলায় মা হারানোর বেদনা নিয়ে বেড়ে ওঠেন হেলাল হাফিজ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত প্রাঙ্গণে বিহঙ্গের জীবন, তারপর স্বাধীনতার পটভূমি রচিত হওয়ার অগ্নিগর্ভ সময়ে দ্রোহের স্লোগান হয়ে মিছিলের কণ্ঠে কণ্ঠে যার কবিতা ঘুরেছে- সেই কবি আজ না ফেরার দেশে।তবে কবিদের মৃত্যু নেই।তারা অনন্তকাল বেঁচে থাকেন তাদের কবিতার মাঝে।
কবিতা লিখে মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ নয়। কিন্তু কবিরা এসব নিয়ে ভাবেন না।আপন মনে গেঁথে যান শব্দের মালা।তবে কবি হেলাল হাফিজ ব্যতিক্রম। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়েই মানুষের হৃদয় জয় করে নেন তিনি।
শুধু প্রেম-ভালোবাসা-বিরহ নয়, জীবনের কঠিন কথাও সহজ ও সুন্দরভাবে বলেছেন হেলাল হাফিজ।তিনি বলেছেন, ‘একটা কিছু করুন/ এভাবে আর কদিন চলে দিন ফুরালে হাসবে লোকে/ দুঃসময়ে আপনি কিছু বলুন/ একটা কিছু করুন।’ এ কথাও কি তোমার-আমার-আপনার-আমাদের নয়?
১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে হেলাল হাফিজের জন্ম। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে নিজের শহরেই। ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে খ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান হেলাল হাফিজ। ওই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে যান তিনি। এরপর কারফিউ জারি হয়। তাই সেখানেই থেকে যান। নাহলে রাতে নিজের হল তথা তৎকালীন ইকবাল হলে (বর্তমানে জহুরুল হক) থাকার কথা ছিল তার। পরে ২৭ মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়ার পর কবি হেলাল হাফিজ নিজের হলে গিয়ে দেখেন যে- চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, লাশ আর লাশ। হলের গেট দিয়ে বেরুতেই কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে দেখা হয় তার। তাকে জীবিত দেখে বুকে জড়িয়ে ধরেন নির্মলেন্দু গুণ। ২৫ মার্চের কালরাতে হেলাল হাফিজের কী পরিণতি ঘটেছে তা জানার জন্য আজিমপুর থেকে ছুটে এসেছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। পরে কেরানীগঞ্জের দিকে আশ্রয়ের জন্য দুজন একসঙ্গে বুড়িগঙ্গা নদী পাড়ি দেন।
এরপর দেশ স্বাধীনের পর সাংবাদিকতায় যোগ দেন কবি হেলাল হাফিজ। তারপর ধীরে ধীরে নিভৃত জীবনের পথ বেছে নেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখবোধের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের আকাশচুম্বি খ্যাতিই তাকে নীরব জীবনের পথে ধাবিত করেছে।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময় ১৯৭২ সালে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন।১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এই পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগ দেন। সর্বশেষ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন এই কবি।
হেলাল হাফিজ প্রেম ও দ্রোহের কবি হিসেবে খ্যাতি পান। কবিতা চর্চার এক পর্যায়ে ছাত্রজীবনেই খ্যাতির চূঁড়ায় আরোহন করেন তিনি। ক্যাম্পাসের আড্ডায় মুখে মুখে ঘুরতে থাকে তার লেখা কষ্টের পঙক্তি। অন্যদিকে ততদিন ঢাকা শহরের দেয়ালে দেয়ালে অগ্নিস্ফূলিঙ্গ হয়ে ভেসে উঠেছে তার বিদ্রোহের বাণী। কবি হেলাল হাফিজের লেখা ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাওয়ার তার শ্রেষ্ট সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্বপ্রস্তুতির প্রক্কালে ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের মিছিলের স্লোগানে পরিণত হয়। ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ নামের কবিতাটি তার কবি জীবনের মাইলফলক হয়ে ওঠে। এরপর আর কখনও কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে কষ্ট করতে হয়নি। একটি কবিতাই তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে।তিনি দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন। আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’।তার তৃতীয় এবং সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।