০৬:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

রাজনৈতিক মদদে টঙ্গীর ১৯ বস্তিতে ৫ হাজার ভয়ংকর ক্যাডার

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ১১:০৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
  • / ১১ বার পড়া হয়েছে।

বিবিএসের জরিপে বাংলাদেশে ১৪ হাজার বস্তিতে ২২ লাখ ভাসমান মানুষ বাস করে। সেখানে টঙ্গীর ১৯ বস্তিতে বাস করা প্রায় তিন লাখ লোকের কথা বলা নেই। এই তিন লাখ ভাসমান লোকের মধ্যে চুরি, ছিনতাই, মাদক, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি ও  রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিষ্ঠায় লক্ষাধিক লোক নানাভাবে জড়িয়ে গেছে।

আর বস্তিবাসীদের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তৈরি হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি ক্যাডার।ছুরি, চাপাতি, চেইন, কোবা, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে তাদের হাতে। তারাই এখন টঙ্গীর অপরাধজগত চষে বেড়াচ্ছে।

সরেজমিনে জানা যায়, টঙ্গীর ১৯ বস্তিতে গোপনে এবং প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। এর মধ্যে টঙ্গী বাজারের মাজার বস্তি, টঙ্গী ব্যাংকের মাঠ ফেনসিডিল পল্লী, কেরানীটেক বস্তি, এরশাদনগর (বাস্তুহারা) বস্তি, বনমালা রেলগেট, মিলগেট নামা বাজার বস্তি, মরকুন, পাগাড় ঝিনু মার্কেট, মধুমিতা রেললাইন, আরিচপুর শেরেবাংলা রোড, মধুমিতা তিনতলা মসজিদ মোড়, বউ বাজার রেললাইন ও টঙ্গী নদীবন্দর বর্তমানে মাদক কেনাবেচায় শীর্ষে।আরো আছে আউচপাড়া, দত্তপাড়া, গাজীপুরা সাতাইশ রোড, হিমারদীঘি মেঘনা রোড ও চেরাগআলী। এই পয়েন্টগুলোতে দিনে-রাতে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, প্যাথিড্রিন, গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদক।অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুরের শিল্প এলাকা টঙ্গীতে ১৯টি বস্তি আছে। এসব বস্তিতে ভোটারসংখ্যা দুই লাখের বেশি।দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ এসব বস্তিতে বসবাস করায় টাকার লোভ দেখিয়ে অতি সহজেই তাদের দিয়ে যেকোনো কাজ করানো যায়। আবার টাকার জন্য নিজেরাও খারাপ কাজ করেন তারা। অপরাধ করতে গিয়ে তারা নিজেরা করেন বা অন্যেরা করায়, মূলত তারা অপরাধী হয়ে উঠছে এতে সন্দেহ নেই।

এরা যেসব অপরাধ করে তার মধ্যে চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, মাদক, চাঁদা তোলা, ধর্ষণ, নিরীহ শ্রেণির মানুষকে ভয় দেখিয়ে নির্যাতন-নিপীড়ন করে টাকা আদায় অন্যতম। এদের দিয়ে প্রভাবশালীরা যেসব অপরাধ করায় সেসব অপরাধের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তার, প্রভাব প্রতিষ্ঠা, দখল, জবরদখল,  বড় অঙ্কের চাঁদার জন্য ভয় দেখানো, জমি দখল, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ।এদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে, কাঁচা টাকার উৎস, ঝুট ব্যবসা দখল, বেদখল অন্যতম। বস্তির বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে সহজলভ্যভাবে অপরাধে ব্যবহার করায় এরা হয়ে উঠছে ভয়ংকর পরগাছা  অপরাধী।

বস্তিভিত্তিক চেইন তৈরি করে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তৈরি হয়ে গেছে পাঁচ হাজারেরও বেশি দুর্ধর্ষ ক্যাডার। দেশীয় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি এদের অনেকের কাছে আছে আগ্নেয়াস্ত্রও। যখন যারা ক্ষমতায় থাকে তখন তারা তাদের হয়ে যায়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি দ্বারাই এরা বেশি নিয়ন্ত্রিত হয়। আর জনপ্রতিনিধিরা যে দলেরই হোক, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থাকার জন্য ওই বস্তিবাসীদের অপরাধের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ক্ষমতাসীনরা।

অনুসন্ধান বলছে, মাদকের হাট ও ক্রাইম জোন তালিকায় টঙ্গী পূর্ব এবং পশ্চিম থানা এলাকা। কয়েক যুগ ধরে এই এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।  টঙ্গীর মাদক পরিচালনায় কাজ করছে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। এর মধ্যে অধিকাংশ মদদদাতার বসবাস টঙ্গী রেল জংশনের চারপাশে। ফলে টঙ্গীর মাদক নির্মূল করতে প্রশাসনের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

জানা গেছে,  মাদক ব্যবসায়ীরা প্রশাসনিক মদদের জন্য সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের জায়গা দখল করে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। টাকার বিনিময়ে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পদ-পদবি নিয়ে এলাকায় মাদকের রাজত্ব গড়ে তুলেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ১০ বছর মাদক ব্যবসা করে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গিয়ে এখন মদদ পাওয়ার জন্য সম্ভাব্য সরকারদলীয় রাজনীতিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার জন্য চেষ্টা করে আসছেন।

এদিকে গত ৭ মাসে ৫ জনের বেশি মানুষ মব জাস্টিসের শিকার হয়ে খুন হয়েছেন। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনা অহরহ।  এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কয়েক শ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার করছে মাদককারবারিদেরও।

সম্প্রতি যৌথ বাহিনী টঙ্গী মাজার বস্তিতে অভিযান চালিয়ে সন্দেহজনক ৬০ জনকে আটক করে পুলিশে দেয়। পুলিশ যাচাই-বাছাই করে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখায়। এরপরও কোনোভাবেই উন্নতি হচ্ছে না টঙ্গীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি অপরাধ দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপরাধ দমনে পুলিশ সব সময় কাজ করে আসছে। আমরা আশাবাদী, অপরাধ দমনে পুলিশ আগের চেয়ে বেশি শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করছে। প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান চলছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

রাজনৈতিক মদদে টঙ্গীর ১৯ বস্তিতে ৫ হাজার ভয়ংকর ক্যাডার

আপডেট সময়ঃ ১১:০৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

বিবিএসের জরিপে বাংলাদেশে ১৪ হাজার বস্তিতে ২২ লাখ ভাসমান মানুষ বাস করে। সেখানে টঙ্গীর ১৯ বস্তিতে বাস করা প্রায় তিন লাখ লোকের কথা বলা নেই। এই তিন লাখ ভাসমান লোকের মধ্যে চুরি, ছিনতাই, মাদক, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি ও  রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিষ্ঠায় লক্ষাধিক লোক নানাভাবে জড়িয়ে গেছে।

আর বস্তিবাসীদের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তৈরি হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি ক্যাডার।ছুরি, চাপাতি, চেইন, কোবা, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে তাদের হাতে। তারাই এখন টঙ্গীর অপরাধজগত চষে বেড়াচ্ছে।

সরেজমিনে জানা যায়, টঙ্গীর ১৯ বস্তিতে গোপনে এবং প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। এর মধ্যে টঙ্গী বাজারের মাজার বস্তি, টঙ্গী ব্যাংকের মাঠ ফেনসিডিল পল্লী, কেরানীটেক বস্তি, এরশাদনগর (বাস্তুহারা) বস্তি, বনমালা রেলগেট, মিলগেট নামা বাজার বস্তি, মরকুন, পাগাড় ঝিনু মার্কেট, মধুমিতা রেললাইন, আরিচপুর শেরেবাংলা রোড, মধুমিতা তিনতলা মসজিদ মোড়, বউ বাজার রেললাইন ও টঙ্গী নদীবন্দর বর্তমানে মাদক কেনাবেচায় শীর্ষে।আরো আছে আউচপাড়া, দত্তপাড়া, গাজীপুরা সাতাইশ রোড, হিমারদীঘি মেঘনা রোড ও চেরাগআলী। এই পয়েন্টগুলোতে দিনে-রাতে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, প্যাথিড্রিন, গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদক।অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুরের শিল্প এলাকা টঙ্গীতে ১৯টি বস্তি আছে। এসব বস্তিতে ভোটারসংখ্যা দুই লাখের বেশি।দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ এসব বস্তিতে বসবাস করায় টাকার লোভ দেখিয়ে অতি সহজেই তাদের দিয়ে যেকোনো কাজ করানো যায়। আবার টাকার জন্য নিজেরাও খারাপ কাজ করেন তারা। অপরাধ করতে গিয়ে তারা নিজেরা করেন বা অন্যেরা করায়, মূলত তারা অপরাধী হয়ে উঠছে এতে সন্দেহ নেই।

এরা যেসব অপরাধ করে তার মধ্যে চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, মাদক, চাঁদা তোলা, ধর্ষণ, নিরীহ শ্রেণির মানুষকে ভয় দেখিয়ে নির্যাতন-নিপীড়ন করে টাকা আদায় অন্যতম। এদের দিয়ে প্রভাবশালীরা যেসব অপরাধ করায় সেসব অপরাধের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তার, প্রভাব প্রতিষ্ঠা, দখল, জবরদখল,  বড় অঙ্কের চাঁদার জন্য ভয় দেখানো, জমি দখল, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ।এদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে, কাঁচা টাকার উৎস, ঝুট ব্যবসা দখল, বেদখল অন্যতম। বস্তির বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে সহজলভ্যভাবে অপরাধে ব্যবহার করায় এরা হয়ে উঠছে ভয়ংকর পরগাছা  অপরাধী।

বস্তিভিত্তিক চেইন তৈরি করে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তৈরি হয়ে গেছে পাঁচ হাজারেরও বেশি দুর্ধর্ষ ক্যাডার। দেশীয় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি এদের অনেকের কাছে আছে আগ্নেয়াস্ত্রও। যখন যারা ক্ষমতায় থাকে তখন তারা তাদের হয়ে যায়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি দ্বারাই এরা বেশি নিয়ন্ত্রিত হয়। আর জনপ্রতিনিধিরা যে দলেরই হোক, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থাকার জন্য ওই বস্তিবাসীদের অপরাধের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ক্ষমতাসীনরা।

অনুসন্ধান বলছে, মাদকের হাট ও ক্রাইম জোন তালিকায় টঙ্গী পূর্ব এবং পশ্চিম থানা এলাকা। কয়েক যুগ ধরে এই এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।  টঙ্গীর মাদক পরিচালনায় কাজ করছে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। এর মধ্যে অধিকাংশ মদদদাতার বসবাস টঙ্গী রেল জংশনের চারপাশে। ফলে টঙ্গীর মাদক নির্মূল করতে প্রশাসনের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

জানা গেছে,  মাদক ব্যবসায়ীরা প্রশাসনিক মদদের জন্য সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের জায়গা দখল করে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। টাকার বিনিময়ে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পদ-পদবি নিয়ে এলাকায় মাদকের রাজত্ব গড়ে তুলেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ১০ বছর মাদক ব্যবসা করে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গিয়ে এখন মদদ পাওয়ার জন্য সম্ভাব্য সরকারদলীয় রাজনীতিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার জন্য চেষ্টা করে আসছেন।

এদিকে গত ৭ মাসে ৫ জনের বেশি মানুষ মব জাস্টিসের শিকার হয়ে খুন হয়েছেন। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনা অহরহ।  এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কয়েক শ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার করছে মাদককারবারিদেরও।

সম্প্রতি যৌথ বাহিনী টঙ্গী মাজার বস্তিতে অভিযান চালিয়ে সন্দেহজনক ৬০ জনকে আটক করে পুলিশে দেয়। পুলিশ যাচাই-বাছাই করে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখায়। এরপরও কোনোভাবেই উন্নতি হচ্ছে না টঙ্গীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি অপরাধ দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপরাধ দমনে পুলিশ সব সময় কাজ করে আসছে। আমরা আশাবাদী, অপরাধ দমনে পুলিশ আগের চেয়ে বেশি শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করছে। প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান চলছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন